![]() |
শ্যামল চৌধুরী ম্যানেজিং এডিটর | কাছেদূরে ডটকম জাগো অমৃত-পিয়াসী চিত আত্মা অনিরুদ্ধ কল্যাণ প্রবুদ্ধ। জাগো শুভ্র জ্ঞান পরম নব প্রভাত পুষ্প সম আলোক-স্নান-শুদ্ধ ।।
বহু বন্ধুর পথ পেরিয়ে দ্রোহ, প্রেম, মানবতা, সাম্য
ও বিরহের বার্তাবাহী বাঙালির প্রাণের কবি হয়ে উঠেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। সাম্রাজ্যবাদ,
ধর্মান্ধতা, ফ্যাসিবাদ, রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন, অনাচার, বৈষম্য, শোষণ ও পরাধীনতার বিরুদ্ধে
অগ্নিকণ্ঠে সোচ্চার নজরুল আমাদের জাতীয় কবি।
অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে কবি ‘চির উন্নত মম শির’ বলে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। যৌবনের প্রাণবন্যায়
নজরুল বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি, সাংবাদিকতাকে আপ্লুত ও গৌরবদীপ্ত করে তুলেছিলেন। বাংলাভাষাকে
তিনি বেগবান ও গৌরবদীপ্ত মহিমায় উন্নীত করেছিলেন। নজরুল যেমন লেখাতে বিদ্রোহী, তেমনি
জীবনেও। মুক্তবুদ্ধি ও চিন্তার পক্ষে কলম ধরেছেন নির্ভীক চিত্তে। ১৯২১ সালের ডিসেম্বরে
কুমিল্লা থেকে ফেরার পথে নজরুল দুটি বৈপ্লবিক সাহিত্যকর্মের সৃষ্টি করেন। একটি হচ্ছে
‘বিদ্রোহী’ কবিতা ও অপরটি ‘ভাঙ্গার
গান’। ১৯২২ সালে ‘ধূমকেতু’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় নজরুলের লেখা কবিতা ‘বিদ্রোহী’। কবিতাটি বাঙালির রক্তে স্ফূরণ ঘটিয়ে দেয় বিপ্লবের।
একই সালে তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ ‘অগ্নিবীণা’ প্রকাশিত হয়। এই কাব্যগ্রন্থের প্রতিটি কবিতাই বাংলা
কাব্যে নতুন বাঁক সৃষ্টি করেছিল।
শুধু কবিতাতেই নয়, গান রচনায় নজরুল অসাধারণ প্রতিভার
স্বাক্ষর রেখেছেন। তিনি প্রায় তিন হাজার গান রচনা ও সুর করেছেন। ছোটগল্প, উপন্যাস,
গান, নাটক লেখার পারঙ্গমতা অর্জন করলেও মূলত কবি হিসেবেই তিনি বেশি পরিচিত। চির নতুনত্বের
অন্বেষী কবি নজরুল সকল শিল্পের মিলিত কলা চলচ্চিত্রেও বিচরণ করেছেন। চলচ্চিত্র শিল্পে
প্রত্যক্ষ কর্ম শুরু হয় ‘ধ্রুব’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। নজরুল তাঁর প্রথম চলচ্চিত্রেই
পরিচালক, গীতিকার, সুরকার, কণ্ঠশিল্পী, সঙ্গীত পরিচালনা এবং অভিনেতার ভূমিকা পালন করেছেন।
কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ
(১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের ১৪ মে) পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে।
বাবা কাজী ফকির আহমেদ, মা জাহেদা খাতুন। ১৯৭২ সালের ২৪ মে স্বাধীন বাংলাদেশের তৎকালীন
রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে ভারত সরকারের অনুমতি নিয়ে কবি নজরুলকে
সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। তাঁকে দেওয়া হয় জাতীয় কবির মর্যাদা। বাংলা সাহিত্য
ও সংস্কৃতিতে অবদানের জন্য ১৯৭৪ সালের ৯ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কাজী নজরুলকে
ডিলিট উপাধিতে ভূষিত করে। একই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি তাঁকে দেওয়া হয় একুশে পদক। কবির জীবনের শেষ
দিনগুলো কাটে তৎকালীন পিজি হাসপাতালে। ৭৭ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
আজ মানবতা ও সাম্যের কবি,
বিংশ শতাব্দীর অগ্রগণ্য প্রগতিশীল কবি নজরুলকে জানাই গভীর কৃতজ্ঞতা, ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাঞ্জলি।
বাংলাদেশ, ২৫
মে ২০১৮ শুক্রবার, ১০:১৫ এএম